বাঙ্গালির হাসির গল্প – কিছুমিছু –জসীম উদ্দীন বড় ভাই হরি প্রায়ই শ্বশুরবাড়ি যায়। সেখানে তাকে কত খাতির-আদর করে। এটা-সেটা খেয়ে এসে নানারকম গাল-গল্প করে। ছোট ভাই নেপাল শুনে মুখ কাঁচুমাচু করে। তার তো বিবাহই হয় নাই। কে তাঁকে খাতির যত্ন করবে সেদিন নেপাল গিয়ে বড় ভাই হরিকে বলল, দাদা, প্রতিবছর তুমি শ্বশুরবাড়ি যাও। কত কি খেয়ে আস, এবার নাহয় তোমার বদলে আমি যাব। বড় ভাই বলল, আচ্ছা আমি এবার যাব না। তুই-ই আমার শ্বশুরবাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসিস। শুনে ছোট ভাই ভারি খুশি। যাওয়ার সময় মা বলে দিল, দেখ, তুই তো তোর দাদার শ্বশুর বাড়ি যাবি। সেখানে উমা আছে। খালি হাতে কেমন করে যাবি। এই পাঁচটা টাকা নাও। একটা কিছুমিছু একটা কিনে নিস। মা মনে করেছিল, ছেলে বাজার হতে কোনো কিছু কিনে নিয়ে সেখানে যাবে। সন্দেশ, রসগোল্লা বা অন্য কিছু। কিন্তু নেপাল ভাবল, কিছুমিছু না জানি কি একটা নতুন জিনিস, বাজার হতে কিনে নিতে হবে। সে বাজারে গিয়ে এ দোকানে যায় সে দোকানে যায়। মনোহারী দোকানে কত রঙ-বেরঙের জিনিস সাজানো রয়েছে। সে গিয়ে দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করে, তোমার কাছে কিছুমিছু আছে নাকি? দোকানদার বুঝতে পারে না কিছুমিছু কি। তাই উত্তর দেয়, নাহ, নাই। মনোহারী দোকান ছেড়ে সে মিষ্টির দোকানে যায়, তারপর হাঁড়ি পাতিলের দোকানে যায়, চাল-ডালের দোকানেও যায়। তোমাদের কাছে কিছুমিছু আছে নাকি? তোমরা আমাকে পাঁচ টাকার কিছুমিছু দাও তো।” এমন বোকা তো কোথাও দেখি নাই। কিছুমিছু আবার দোকানে বিক্রি হয়? তাদের কেউ তার গায়ে ধুলা ছিটিয়ে দিল, কেউ তার মাথায় কেরোসিন তেল মালিশ করতে আসল, কেউ তাঁকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দিল। মনের দুঃখে সে খালি হাতেই ভাই-এর শ্বশুর বাড়ি রওয়ানা হল।…
Continue reading